খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল মাহাদীর পরিচয় ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ওবায়দুল্লাহ আল মাহাদীর পরিচয় ও কার্যাবলী সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। আপনারা হয়তো এই বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঘুরে দেখেছেন। কিন্তু এই বিষয়ে হয়তো সঠিক কোন তথ্য পাচ্ছেন না। তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ওবায়দুল্লাহ আল মাহাদীর পরিচয় ও কার্যাবলী নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব।
এছাড়াও আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আরও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকেরে আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
খলিফা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ
ওবায়দুল্লাহ আল মাহাদীর প্রকৃত নাম ছিল সাঈদ বিন আল হুসায়ন। তিনি ছিলেন ফাতেমি খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম খলিফা। তিনি ছিলেন এক পরম সৌভাগ্যবান মানুষ। সৌভাগ্যবশত তিনি আবু আব্দুল্লাহ আস শিয়ীর মত একজন অনুসারী পেয়েছিলেন- যার সহায়তায় 909 খ্রিস্টাব্দে আল মাহদী ফাতেমি খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিলেন।
খলিফা হিসেবে মাহদীর কার্যাবলী
ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী একজন সুযোগ্য শাসক ও নিষ্ঠাবান সংগঠক ছিলেন। তিনি সুদীর্ঘ ২৬ বছর (৯০৯ - ৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) ফাতেমি খিলাফত পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি নিজের ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করা, ফাতেমি খিলাফতকে স্থায়ী ভিত্তি প্রদান এবং এর সীমানা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ ছড়াও নানা কার্যাবলী সম্পাদন করেন।
আবু আব্দুল্লাহ আশ শিয়ীকে প্রাণদণ্ড প্রদান
ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী ফাতেমি খিলাফতের প্রথম খলিফা হলেও এ খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবু আব্দুল্লাহ আশ শিয়ীর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমি খিলা প্রতিষ্ঠার প্রধান কৃতিত্বের দাবিদার। বলা হয় যে, আব্বাসী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবু মুসলিম খোরাসানির যে অবদান, তেমনি ফাতেমে খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় আবু আব্দুল্লাহ আশ শিয়ীর অবদান ছিল।
তবে ইতিহাসের নির্মম পরিণতি এই যে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতাসীন খলিফাদের রোষানলে পতিত হন এবং শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। উল্লেখ্য, খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর পরই অবায়দুল্লাহ আল মাহদী সম্পর্কে অনেকের মতো আশ শিয়ীরও মোহমুক্তি ঘটে। তার মধ্যে প্রত্যাশিত অলৌকিক ক্ষমতা না দেখতে পেয়ে কাতামা গোত্রের লোকজনও তার প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন।
অনেকে মনে করেন আবু আব্দুল্লাহ আশ শিয়ীর মনের মধ্যেও একটি দুর্ভিসন্ধি ছিল। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী কে সামনে রেখে তিনি শাসন কাজ পরিচালনা করবেন। কিন্তু খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করলে অবায়দুল্লাহ আল মাহাদীর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রয়াস তাকে বিচলিত করে। ফলে তিনি ওবায়দুল্লাহকে ক্ষমতা যুক্ত করার গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
দূরদর্শী খলিফা বুঝতে পেরে নিজের ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য তার একসময়ের মিত্র ও সুহৃদ আবু আব্দুল্লাহ আশ শিয়ী ও তার ভাই আবুল আব্বাসকে দরবারে ডেকে আনেন এবং তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেন। এভাবে একজন অসাধারণ প্রতিভাধর নেতার জীবনাবসান ঘটে।
কাতামাাদের বিদ্রোহ দমন
এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, মূলত বারবার কাতামা গোত্রের সার্বিক সহযোগিতায় উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমি খিলাফত প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল। আরে অবদানের জন্য স্বাভাবিকভাবেই ফাতেমি খিলাফতে কাতামাগন বিশেষ সুযোগ সুবিধা লাভের প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে তারা তা পায়নি। ও পড়ন্ত খলিফা আল মাহাদীর মধ্যেও কোন অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় না পেয়ে কাটামা তার প্রতি সংশয়াপন্ন হয়ে ওঠেন।
এ অবস্থায় খলিফা কর্তৃক আসিয়া কে হত্যার ঘটনায় তাদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ হত্যার প্রতিবাদে কাতামাগন কায়রোয়ানে দাঙ্গা শুরু করে। এ দাঙ্গা আরব বার্বার বিরোধ ও সংঘর্ষে রূপ নিলে খলিফা আল মাহাদী বহু কষ্টে তা দমন করে।
খলিফা আল মাহাদীর নতুন রাজনীতি স্থাপন
মাহদী প্রথমে রাক্কাদায় রাজধানী স্থাপন করে কাতামা গোত্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নব প্রতিষ্ঠা খিলাফতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাম্রাজ্যের সংহতি বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। পরবর্তীকালে ৯১৬-৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাহাদি কায়রোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ পূর্বে মাদিয়া নগর প্রতিষ্ঠা করে সেখানে নতুন রাজধানী স্থাপন করেন।
খলিফা আল মাহাদীর রাজ্য জয়
সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে মাহদী সিসিলি, মাল্টা, কর্সিকা ইত্যাদি দ্বীপে প্রভুত্ব কায়েম করেন এবং সার্ডিনিয়ায় নৌ অভিযান চালান। তিনি লিবিয়ার ত্রিপোলি সহ মৌরিতানিয়ার অনেক স্থান জয় করেন। খলিফা আল মাহাদীর প্রত্যক্ষ সেনাপতি আরোবা বিন ইউসুফ ইদ্রিসী বংশের শাসনাধীন মরক্কো আক্রমণ ও জয় করেন।
ফলে ফাতেমি খিলাফতের সীমা পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। মাহদী ওমর বিন হাফসুন এর সাথে যোগাযোগ করে স্পেন জয়ের চেষ্টা করেন। ৯১৪ খ্রিস্টাব্দে আলেক যানরিয়া দখল করলেও তিনি মিশর জয় করতে পারেননি।
খলিফা আল মাহদীর চরিত্র
খলিফা আল মাহদী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সাহসী, বিচক্ষণ, দুরদৃষ্টির অধিকারী ও উচ্চাভিলাসী শাসক ছিলেন। তার চারিত্রিক দৃঢ়তা সমকালীন ইতিহাসবিদগণের সব সপ্র শংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একজন নিষ্ঠাবান ধার্মিক হিসেবে আল মাহাদী সুপরিচিত ছিলেন। তিনি শিয়া ইসমাইলও মতাদর্শ প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা করেন। তার শাসনামলে মদ্যপানসহ অধার্মিক আচরণবিদ নিষিদ্ধ করা হয়।
খলিফা আল মাহাদীর কৃতিত্ব
খলিফা আল মাহাদী শাসক হিসেবেও অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে তিনি ফাতেমি খিলাফতকে একটি সুদৃঢ় বৃত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সাম্রাজ্যের সীমা সম্প্রসারণ এবং নতুন রাজধানী স্থাপন সহ নানাবিধ প্রশাসনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি শাসক হিসেবে নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
একজন প্রজাবৎসল শাসক হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। ঐতিহাসিক আস সুয়ুতির মতে ওবায়দুল্লাহ জনসাধারণের জন্য উদারনীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং তারাও খলিফার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। খলিফা স্থপত্য প্রীতি ও উল্লেখ করার মতো। তিনি কাইরোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ পূর্বে মাহাদিয়া নামক একটি নতুন নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।।
মার্বেল পাথরের জমকালো রাজপ্রাসাদ ও সুশোভিত পুকুর সহ অন্যান্য স্থাপত্য রাজি খলিফার সুরুচির পরিচায়ক। ঐতিহাসিক আমির আলী খলিফা আল মাহাদীর রাজত্বকালের প্রশংসা করেছেন। তার মতে খলিফা আল মাহাদীর শাসন সুদৃঢ় ও তিজোদীপ্ত ছিল। বস্তুত ওবায়দুল্লাহ আল মাহাদী কেবল ফাতেমী খিলাফতের প্রথম শাসকই নয়, বরং তিনি এবং বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন।
পি.কে একটি তার সম্পর্কে যথার্থ বলেছেন- “He proved himslef a most capable ruler” অর্থাৎ তিনি নিজেকে একজন অতিশয় দক্ষ শাসক হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। দীর্ঘ ২৬ বছর রাজত্বের পর খলিফা অবাইদুল্লাহ আল মাহাদী ৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর পরিচয় ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেও বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও আমরা এইখানে খলিফা আল মাহাদির সম্পর্কে আরো বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি। তাহলে আপনাদের আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের আরো নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url