মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়। বিস্তারিত আলোচনা
মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব। মাশরুম একটি ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা নিয়ে আসে। তবে এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। পাশাপাশি মাশরুম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এর মধ্যে কিছুটা খাওয়ার যোগ্য এবং কিছুটা বিষাক্ত।
আর এই সকল সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। এজন্য আমরা আজকের এই আর্টিকেলে উক্ত বিষয়ের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
বর্তমান বিশ্বে নিরামিষ ভোজীদের জন্য মাশরুম এখন মাংস হিসেবে পরিচিত। আর এই মাশরুম আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের অভাব দূর করে থাকে। এজন্য এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সকলের জেনে থাকা অত্যন্ত জরুরী। তাহলে আমরা মাশরুম খাওয়ার সর্বাধিক উপকারিতা পেতে পারি। এটি খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
- প্রথমেই মাশরুম খাওয়ার আগে ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে| যার ফলে তার মধ্যে থাকা মহিলা ব্যাকটেরিয়া বারাসায়নিক পদার্থ দূর হয়ে যায়|
- বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের প্রতিদিন চাইলে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম মাশরুম খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।
- মাশরুম একটি হাই ফাইবার যুক্ত খাবার এজন্য পুষ্টিবিদরা এটিকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- সন্ধ্যার পর এই হাই ফাইবার যুক্ত মাশরুম খেলে এটি আমাদের পেটে এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য এটিকে সন্ধ্যার পূর্বে খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারিতা নিয়ে আসবে।
- এছাড়াও আপনারা মাশরুমকে সালাত হিসেবেও খেতে পারেন।
বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়
এই পৃথিবীতে প্রায় তিন লক্ষ প্রজাতির মাশরুম রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার প্রজাতির মাশরুম খাওয়ার অযোগ্য। আর তাদের মধ্যে ১০ হাজার প্রজাতির মাশরুমের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। সব ধরনের ছত্রাকই মাশরুম নয়। শুধুমাত্র খাওয়ার উপযোগী ছত্রাক কেই মাশরুম বলা হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই মাশরুম খেতে পছন্দ করি।
কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত মাশরুম রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এজন্য আমরা আজকের এই আর্টিকেলে বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। যাতে আপনারা মাশরুম দেখলেই চিনতে পারেন যে কোনটি খাওয়ার যোগ্য এবং কোনটি বিষাক্ত মাশরুম। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায় সম্পর্কে:
- অধিকাংশ যে সকল মাশরুমের রং উজ্জ্বল বা আকর্ষণীয় হবে সেগুলো বিষাক্ত মাশরুম।
- অম্ল গন্ধযুক্ত বা ঝাঁঝালো প্রজাতির মাশরুমগুলো বিষাক্ত হয়ে থাকে।
- ছাতার মত আকৃতির পাশাপাশি যে সকল মাশরুমের কাণ্ডে একটি সাদা রিং থাকে সেগুলো বিষাক্ত মাশরুম।
- এছাড়াও যে সকল মাশরুমের উপরের অংশটি কুঁচকানো এবং লম্বাটে অথবা মাশরুমের ওপরের অংশ যদি এলোমেলো ভাবে চুপসে থাকে তাহলে সেটি বিষাক্ত মাশরুম হয়ে থাকে।
- বিষাক্ত মাশরুমের প্রজাতিগুলোর ব্যাসিডিওস্পোর বেগুনি রঙের হয়ে থাকে।
- যে সকল মাশরুমের গায়ে আঘাত করলে বা কাঁটা হলে যদি তার রং পরিবর্তন হয়ে নীল বা সবুজ হয় তাহলে সেটি বিষাক্ত মাশরুম হতে পারে।
মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা সকলেই মাশরুম কে ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ হিসেবে চিনে থাকি। একই সাথে এটি অত্যান্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। মাশরুমের মধ্যে পেনিসিলিন নামক একটি এন্টিবায়োটিক থাকে যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী এবং এটি খেতে খুবই মজাদার। এছাড়াও মাশরুমের মধ্যে আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা।
তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্যই। আজকে আমরা মাশরুমের উপকারিতার পাশাপাশি এর অপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করব। যেটি জানার ফলে আপনারা মাশরুমের পুষ্টি গুনাগুন এবং এর অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে পারবেন। তাহলে চলুন এবার মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক।
মাশরুমের উপকারিতা
- মাসুম খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে নিয়মিত মাসরুম খেলে এটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সমস্যা দূর করে।
- মাশরুমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং ভিটামিন ডি। এর জন্য শিশুদের মাশরুম খাওয়ানোর ফলে এটি তাদের দাঁত ও হাড় গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- মাশরুমের মধ্যে নিউক্লিক অ্যাসিড ও এন্টি এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকার কারণে এটি কিডনির রোগ ও অ্যালার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- মাশরুমের মধ্যে রয়েছে খনিজ লবণ এর উপাদান যেটি খাওয়ার ফলে এটি আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- নিয়মিত পরিমাণমতো মাশরুম খেলে এটি আমাদের ক্যান্সার ও টিউমারের মত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
- সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন মাশরুমকে খাদ্য তালিকায় রাখলে। এটি অ্যানিমিয়া দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা খাদ্যের তালিকায় মাশরুম যোগ করলে। এটি তাদের ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করবে।
- গর্ভাবস্থায় মাশরুম খেলে এটি ভ্রূণের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং এটি ফলিক অ্যাসিড এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে।
মাশরুমের অপকারিতা
- সব ধরনের মাশরুম খাওয়া উপযোগী নয়। কিছু মাশরুম রয়েছে যেগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত। আর এগুলো খেলে পেটের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, লিভারের ক্ষতি এমন কি মৃত্যু হতে পারে।
- অপরিচিত বুনো মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। কারণ এর কিছু প্রজাতি বিষাক্ত হতে পারে।
- তাছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে মাশরুম খেলে এটি আমাদের পেটের গ্যাসের সমস্যা, বদহজম বা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- এছাড়াও কিছু প্রকারের মাশরুমে অক্সালেট এবং ফাইটোঅ্যালেক্সিন থাকে। যা খাওয়ার ফলে এটি দেহের কিছু মিনারেল শোষণে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
মাশরুম কোন ধরনের উদ্ভিদ
মাশরুম আসলে কোন উদ্ভিদ নয়। এটি একটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের অন্তর্ভুক্ত। উদ্ভিদ যেমন ক্লোরোফিল ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, মাশরুম কিন্তু সেটা পারেনা। এটি মৃত যৌগ পদার্থ থেকে পুষ্টি শোষণ করে বেঁচে থাকে। মাশরুম একটি ক্লোরোফিল বিহীন ছত্রাক, তাই এটি ফটোসিনথেসিস করতে পারে না। এরা নিজের খাদ্য নিজে তৈরি না করে বাইরের কোনো উৎস থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
মাশরুম বিভিন্ন পরিবেশে জন্মাতে পারে যেমন: মাটি, গাছের গুড়ি বা পচা গলা জৈব পদার্থের উপর। মাশরুমের বিভিন্ন জাত রয়েছে যার মধ্যে বেশ কিছু মাশরুম খাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর কিছু প্রজাতি বিষাক্ত। সুতরাং মাশরুম গ্রহণের পূর্বে এটি খাওয়ার উপযোগী কিনা সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাশরুম পাউডার খাওয়ার উপকারিতা
তারা ইতিপূর্বেই মাশরুমের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনারা অনেকেই হয়তোবা জানেন না, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্যই। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা মাশরুম পাউডার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যেটি জানার পরে আপনারা নিয়মিত মাশরুম পাউডার খাদ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।
- মাশরুম পাউডারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ডি এবং বি কমপ্লেক্স এবং মিনারেল, যা আমাদের শরীরের শক্তি যোগায় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- মাশরুম পাউডার এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড়ের উন্নতি করে এবং ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
- মাশরুম পাডারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বক ও দেহের পার্থক্য বিলম্বিত করতে সাহায্য করে।
- মাশরুম পাউডার খাওয়ার ফলে এটি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে।
- মাশরুম পাউডারের মধ্যে ভিটামিন বি থাকায় এটি মানসিক স্বাস্থ্যের কার্যক্রম উন্নত করতে সহায়তা করে থাকে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যেগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উন্নতি সাধন করতে সহায়ক হবে।
আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর এ ধরনের আরও নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। কারণ আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url