ব্যায়াম করার পর কি কি ধরনের প্রোটিন খাওয়া উচিত।
ব্যায়াম করার পর কি কি ধরনের প্রোটিন খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে আমরা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব। আমরা অনেকেই নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকি। তবে ব্যায়াম করার পর আমাদের কি ধরনের প্রোটিন খাওয়া উচিত এই সম্পর্কে জানা নেই।
তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা উক্ত বিষয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এজন্য আপনারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।
ব্যায়াম করার পর কি কি ধরনের প্রোটিন খাওয়া উচিত
ব্যায়াম করার পর আমাদের ঘাম ঝরে আর এর ফলে আমাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায়। পুষ্টিবৃন্দ বলেন যে, জিমে গিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে বা বাড়িতে ওয়েট ট্রেনিং বা কার্ডিয়োর মতো ব্যায়াম করলে এরপরে আমাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া খুবই জরুরী।
এর ফলে প্রোটিনযুক্ত খাবার আমাদের শরীরের পেশির শক্তি বাড়াতে সহযোগিতা করে। তাছাড়াও শরীর চর্চার করে আমাদের অনেক ক্লান্তি ভাব আসে যা প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলেই সেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ব্যায়াম করার পর কি কি প্রোটিন খাওয়া উচিত।
এই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
- প্রথমত আমরা ব্যায়াম করার পরে আমাদের শরীর থেকে অনেকটাই প্রোটিনের সাথে সাথে জল এর ঘাটতি দেখা যায়। আর এর জন্য আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য আপনারা ব্যায়াম করার পরে যথেষ্ট পরিমাণে জল এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
- শরীরের যথেষ্ট পরিমাণ এর চাহিদা মেটানোর জন্য আপনারা আপনার বাড়িতে থাকা দুধ বাদই এর সঙ্গে আপেল, কলা এবং প্রোটিনযুক্ত কিছু ফল দিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন।
- আমাদের অনেকেরই ঘরে পাতা দই পাওয়া যায়। আর এই কাপ দই থেকে প্রায় ২৫ গ্রামের মতো প্রোটিন পাওয়া যায়।
- এছাড়াও আপনারা আপনাদের শরীরে প্রোটিন এর চাহিদা মেটানোর জন্য ডিম খেতে পারেন। আপনারা একটি দিমকে সেদ্ধ করে অথবা পোচ করেও খেতে পারেন।
- আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা নিরামিষ খাই না। তারা শরীর চর্চার পর সয়াবিন খেতে পারেন। এক কাপ সয়াবিন থেকে অন্তত ২৯ গ্রাম মত প্রোটিন পাওয়া যাবে।
- এছাড়াও আপনারা শরীর চর্চার পর শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য বাদাম খেতে পারেন। এজন্য আপনারা আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম ইত্যাদি জাতীয় বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেতে পারেন। কারণ এ সকল বাদামগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
- আপনারা ব্যায়াম করার ১ থেকে ২ ঘন্টা আগে চাইলে একটি কাপে ছোলা এবং কিসমিস ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এরপরে ব্যায়াম করার পরে সে ভিজিয়ে রাখা ছোলা এবং কিসমিস খেতে পারেন। এটি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।
ব্যায়াম করার কতক্ষণ পর খাওয়া উচিত
কম বেশি সকলেই আমরা এখন ব্যায়াম এর সাথে জড়িত। কেউবা বডি ফিটনেস ঠিক করার জন্য ব্যায়াম করে আবার কেউ শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য। আর ব্যায়াম করার পরে শরীরের শক্তি হারায়, যার ফলে আমাদের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।
আর ব্যায়ামের পর এই ছোট্ট সময়টিকে বলা হয় মেটাবলিজম উইন্ড। আর এই সময় প্রায় ৩০ মিনিটের মত আমাদের শরীরে প্রোটিন সংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। এটিকে বলা হয় একেএ বিল্ডিং মাসল। আর এই সময় আমাদের প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হয়।
তবে ব্যায়াম করার কতক্ষন পরে আমাদের খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। সাধারণত ব্যায়াম করার পরে কয়েক মিনিট পরেই খাওয়া যায়। তবে হার্টবিট নরমাল হতে আর বডির কোর টেম্পারেচার নরমাল হতে যে সময়টুকু লাগে, সেই সময়টুকু পার হলেই খাওয়া যাবে।
আর বেশিরভাগ মানুষের জন্য এই সময়টুকু ৫ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এজন্য আপনারা ব্যায়াম করার পর আপনাদের বডির কোর টেম্পারেচার নর্মাল হওয়ার পর অথবা ব্যায়াম করে ৫ থেকে ১৫ মিনিট রেস্ট করার পরে খাবার খেতে পারবেন।
সকালে ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত
সকালে ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত? এ সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। আমরা এখন এ সম্পর্কে আপনাদের সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে বা বেশিরভাগ মানুষই সকালে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করে থাকে।
আর সকালে ব্যায়াম করার পর আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। আর আমাদের বেশি গুলোকে পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আর সকালে ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত এই সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে।
তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা এই বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। সাধারণত করার পরে আমাদের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং কিছু পরিমাণ থাকে এমন ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
সকালে ব্যায়ামের পর কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
- প্রথমত আপনাদের ব্যায়াম করার পরে দুই থেকে তিনটি সিদ্ধ ডিম বা পোচ করে খেতে হবে।
- এরপরে আপনাদের শর্করা জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি আলু, কলা, আনারস ইত্যাদি শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- এছাড়াও আপনারা ওটস, পিনাট বাটার এবং কাঠবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আপনাদের ঘরোয়া খাবারের মধ্যে চিঁড়ের পোলাও, সুজি অথবা সবজি খিচুড়ি খেতে পারেন।
- এছাড়াও আপনারা প্রোটিন শেক খেতে পারেন। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং সুবিধাজন।ক এটি প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট এর ভারসাম্য সরবরাহ করতে সহযোগিতা করে।
সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে। আবার এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা শুধু সারাদিন শুয়ে বসে মোবাইল ফোন টিপে সময় কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম অবশ্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে এটি আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সেই সাথে ব্যায়াম করার ফলে এটি আমাদের শরীর থেকে হ্যাপিনেস হরমোন নিঃসরণ করে, যার ফলে আমাদের মন মেজাজ ভালো থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছে যারা খুব সকালে উঠে ব্যায়াম করে। আবার অনেকেই সন্ধ্যায় সকল কাজ শেষ করে ব্যায়াম করে থাকে।
তবে আপনারা জেনে অবাক হবেন যে সকালে ব্যায়াম করলে এর বাড়িতে কিছু সুবিধা রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে হয়তোবা আপনাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা সম্পর্কে।
- সকাল সকাল উঠে প্রেম করলে আমাদের সারাদিন কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়।
- সকালে ব্যায়াম করলে এটি আমাদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সাথে সকাল বেলায় শরীর চর্চা করলে আমাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
- সকাল বেলায় ব্যায়াম করলে আমাদের যে কোন কাজের প্রতি ফোকাস করা সহজ হয়।
- সকালবেলায় ব্যায়াম করলে আমাদের সারাদিন মন মেজাজ ভালো থাকে।
- সকালে ব্যায়াম করলে এটি আমাদের রাতে ভালো ঘুম করতে সাহায্য করে থাকে।
- সকালে ব্যায়াম করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হচ্ছে, এটি আমাদের ক্ষুধার হরমোন কমিয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
- সকালের ব্যায়াম করলে আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ে যার ফলে নিয়মিত সকালে ব্যায়াম করলে এটি আমাদের শরীরের ওজন কমাতেও সহযোগিতা করবে।
- সকালে নিয়মিত ব্যায়াম করলে এটি আমাদের হার্টের সমস্যা কমাবে যার ফলে এটি আমাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
দিনে কতবার ব্যায়াম করা উচিত
দিনে কতবার ব্যায়াম করা উচিত? এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা জানতে চেয়েছেন। মূলত দিনে কতবার ব্যায়াম করা উচিত এটি নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য, স্বাস্থ্য, ফিটনেস স্তর এবং আপনার সময়ের ওপর। তবে সাধারণ কিছু গাইডলাইন রয়েছে, যা অনুসরণ করলে আপনারা ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
প্রথমত সাধারণ স্বাস্থ্য ও ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন একবার ব্যায়াম করাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট। আপনারা প্রতিদিন একবার করে সময় বের করে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে পারবেন। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আপনারা ৫ দিন ব্যায়াম করলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
এছাড়াও যদি আপনারা আপনাদের অতিরিক্ত ওজন কমানো বা আপনাদের পেশী বাড়ানোর লক্ষ্য থাকলে আপনারা দিনে দুইবার ব্যায়াম করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনারা সকালে কার্ডিওক ট্রেনিং এবং বিকেল বা সন্ধ্যায় স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে পারেন।
তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে। প্রতিদিন ব্যায়াম না করলেও কোন ধরনের সমস্যা নেই তবে সপ্তাহে ৩-৫ দিন ব্যায়াম করা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। এছাড়াও ব্যায়াম করার পরে নিজের শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত
অনেকেই রয়েছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করে থাকে। তবে তারা অনেকেই জানেনা যে, খাওয়ার কতক্ষন পর ব্যায়াম করাটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আর এই বিষয়টি না জেনে থাকার কারণে অনেকেরই ব্যায়াম করতে গিয়ে নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
সাধারণত ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে আপনারা খালি পেটে বা ভরা পেটে ব্যায়াম করবেন না। আপনারা সকালে হালকা নাস্তা খাওয়ার ৪৫-৬০ পর ব্যায়াম করতে পারবেন। এছাড়াও যদি আপনারা ভারী খাওয়ার খেয়ে থাকেন তাহলে খাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।
ভরা পেটে ব্যায়াম করলে কি হয়
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ভরা পেটেই বা ভারী খাবার খাওয়ার পরই ব্যায়াম করে থাকে। তবে আপনারা জেনে অবাক হবেন যে ভরা পেটে ব্যায়াম করলে আমাদের নানান ধরনের অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন এইবার এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
- ভরা পেটে ব্যায়াম করলে আমাদের পেট ভারী মনে হয় এবং আমাদের পেটের মধ্যে খাবার থাকার কারণে শরীর সেই খাবার হজম করতে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে ব্যায়ামের জন্য রক্ত সঞ্চালন পেশিতে যেতে হয় যে কারণে আমাদের হজম ঠিকমতো হয় না।
- ভরা পেটে ব্যায়াম করলে অনেক সময় দৌড়ানোর মত এক্সারসাইজ করার ফলে বমি চলে আসতে পারে বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
- আবার অনেকেরই ভরা পেটে ব্যায়াম করলে গ্যাস বা ঢেকুরের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- খাওয়ার পরপরই বা ভরা পেটে ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর ক্লান্ত অনুভব হতে পারে। যার ফলে আমাদের ব্যায়ামের প্রতি ফোকাস বা এনার্জি কমে আসে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা ব্যায়াম করার পর কি কি ধরনের প্রোটিন খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও আমরা আজকের আর্টিকেলে আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
এ ধরনের আরো নিত্য নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন এবং আমাদের সাপোর্ট করুন। কারন আমরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাংলা আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করে থাকি। এতক্ষণ ধরে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url