কোরবানির জন্য কেমন পশু নির্বাচন করতে হবে
কোরবানির জন্য কেমন পশু নির্বাচন করতে হবে
- পশুর বয়স: প্রথমত কোরবানির জন্য যে পশুর নির্ধারণ করতে হবে সেই পশুর বয়স অবশ্যই পূর্ণ হতে হবে। আর এজন্য উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর, গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হবে। তবে ছাগলের বয়স অবশ্যই ১ বছরের কম হলে তা কোন অবস্থাতেই কোরবানির জন্য জায়েজ হবে না।
- পশু ত্রুটিমুক্ত হওয়া: কোরবানির পশু অবশ্যই যেকোনো ধরনের যাবতীয় দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। এখন ধরুন আপনার একটি পশু রয়েছে যেটি আপনি কোরবানি দিতে চান কিন্তু সেই পশুর দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে বা একটি চোখ অন্ধ এমন পশু কোরবানির জন্য জায়েজ হবে না। হযরত বারা ইবনে আজেব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো কোরবানির পশুর মধ্যে কোনগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। তখন তিনি তার চারটি আঙ্গুলের ইশারা করলেন এবং বললেন চার প্রকার পশু থেকে সেগুলো হলো- ১. স্পষ্ট খোঁড়া প্রাণী; ২. একদম অন্ধ প্রাণী; ৩. খুব অসুস্থ প্রাণী এবং ৪. অত্যধিক দুর্বল প্রাণী, যা আর সুস্থ হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৮৬৯৭)
- পশুর দাঁত ও শিং থাকা: যে পশুর দাঁত নেই, ঘাস বা খাদ্য খেতে পারেনা এমন পশু কুরবানী দেওয়া ইসলামে নাজায়েজ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও যে সকল পশুর শিং গোড়া থেকে ভেঙে গেছে বা যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু অংশ শিং ভেঙে গেছে এমন ধরনের পশু কোরবানি দেওয়া যায় যে নয়।
- পশুর চেহারা ও শরীর আকর্ষণীয় ও পরিচ্ছন্ন হওয়া: আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দেওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে আপনার পশুকে ভালোমতো খাওয়াতে হবে এবং পশুর যত্ন নিতে হবে যাতে পশুর চেহারা সুন্দর এবং শরীর আকর্ষণীয় হয়। এমন ধরনের পশু কোরবানি জন্য অধিক ফজিলত পূর্ণ।
- নিয়ত ও হালাল উপার্জনে পশু কেনা: আপনি যে পশু কোরবানি দিবেন সেই পশুটি অবশ্যই হালাল উপার্জনে অর্থ দিয়ে পশুটি কেনা আবশ্যক। তাছাড়া হারাম টাকায় বা হারাম উপার্জনের অর্থ দিয়ে পশু কোরবানি দেওয়া গ্রহণযোগ্য হবে না।
কোরবানির পশু কেনার সময় করণীয় কি
- প্রথমত আমাদের পশুর স্বাস্থ্য দেখতে হবে। দেখতে হবে যে পশুর চোখ পরিষ্কার ও উজ্জ্বল কিনা, পশুর স্বভাব সক্রিয় চঞ্চল কিনা, পশুর দাঁত, শিং, লেজ ও পা ঠিকঠাক আছে কিনা এ সকল বিষয় ভালোমতো খেয়াল করুন।
- এরপর দুই বছরের কম বয়সেই গরু বা মহিষ এবং ছয় মাসের কম বয়সী ছাগল বা ভেড়া কোনভাবেই কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয় এজন্য প্রাপ্তবয়স্ক দেখে গরু ছাগল বাছাই করা উচিত।
- কোরবানির জন্য গাভী নাকে নাই ভালো। যদিও বা আপনারা গাভী কিনে থাকেন তাহলে কেনার পূর্বে অবশ্যই ভালোমতো নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে গাভিটি গর্ভবতী কিনা। যদি গাভীটি গর্ভবতী হয় তাহলে কোরবানি দেওয়া জায়েজ হবে না।
- গরু কেনার সময় অবশ্যই সুস্থতা যাচাই করে কেনার চেষ্টা করবেন। গরু কেনার সময় গরুর সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিভ দিয়ে খাওয়ার টেনে খায় তাহলে গরুটি সুস্থ। আর যদি অসুস্থ হয় তাহলে সে খাবার খেতে চাইবে না।
- এখন গরুকে আকর্ষণীয় করার জন্য অনেক সময় ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। এইজন্য আপনারা এটি নিশ্চিত করতে করুক কেনার সময় দেখবেন গরু যদি শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত নেই এবং মনে হয় গরু হাপাচ্ছে ও প্রচন্ড ক্লান্ত দেখায় তাহলে বুঝে নেবেন সেই গরুটিকে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে।
- এছাড়াও কোরবানির পশু কেনার সময় দেখবেন পশু দুর্বল হলে সেই পশু ঢলতে থাকবে এবং হাঁটাচলা করতে চাইবে না। সেই সাথে মুখে ক্ষত থাকলে তাদের খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দিবে এবং মুখ দিয়ে লালা পড়বে এবং অনেক সময় মাথা নিচের দিকে রেখে ঝিমাবে ও কান নিচের দিকে ঝুলে থাকবে।
- কোরবানির পশু কেনার পর অবশ্যই সেই পশুকে নিরাপদ ভাবে পরিবহন করে আনতে হবে এবং পশুর খাদ্য, পানি ও বিশ্রাম এ সকল বিষয়ের যত্ন নিতে হবে।
১. কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া
কোরবানির সময় এই দোয়া পড়া উত্তম:
بِسْمِ اللّٰهِ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُمَّ هٰذَا مِنْكَ وَلَكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা হাযা মিনকা ওয়ালাকা।
অর্থ: "আল্লাহর নামে, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। হে আল্লাহ! এটা তোমারই পক্ষ থেকে এবং তোমারই জন্য।"
২. কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম
-
কিবলামুখী করে পশুকে শোয়াতে হবে।
-
জবাইকারী মুসলমান হতে হবে এবং সুস্থ-সবল হওয়া উত্তম।
-
ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে যাতে পশুকে কষ্ট না হয়।
-
পশুর গলা, খাদ্যনালী, নিশ্বাসনালী ও দুই রগ কাটতে হবে।
-
জবাইয়ের আগে-পরে পশুর সঙ্গে নির্দয়তা করা যাবে না।
-
জবাই করার সময় উপরোক্ত দোয়া পড়া উচিত।
৩. কোরবানির পশু অসুস্থ হলে করণীয়
-
যদি মারাত্মক রোগ হয় (যেমন: খুব দুর্বল, ল্যাংড়া, অন্ধ, কানে বা লেজে বড় কাটা ইত্যাদি) — তাহলে সে পশু কোরবানির জন্য অযোগ্য।
-
যদি সামান্য অসুস্থতা হয় যা কোরবানিতে বাধা নয় (যেমন: হালকা জ্বর বা সামান্য ক্ষত), তবে কোরবানি করা যাবে।
-
কোনো সন্দেহ থাকলে আলেমের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
৪. কোরবানির পশু দিয়ে আকিকা যাবে কিনা
-
ফিকহ অনুযায়ী, একই পশু দিয়ে কোরবানি ও আকিকা একসাথে করা যাবে না।
-
কারণ, উভয়টাই আলাদা ইবাদত এবং পৃথক নিয়তের দাবি রাখে।
-
তবে কেউ যদি পৃথকভাবে দুটি অংশ নির্দিষ্ট করে নেয় (যেমন একটি গরুর ৭ ভাগের এক ভাগ আকিকার জন্য), কিছু আলেম শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ বলেছেন, তবে তা বিতর্কিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url